বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় সরকারি চাকরি পেতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরকে বাবা বানিয়েছেন শামীম হোসেন নামে এক যুবক। এ কাজে প্রথমে তিনি পরিবর্তন করেন একাডেমিক সার্টিফিকেট। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। তারপর ধাপে ধাপে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজে আশ্রয় নেন প্রতারণার। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট নিতেও তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নেন। শেষ পর্যন্ত মেলে সরকারি চাকরি।সাত বছর ধরে দুপচাঁচিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক শামীম হোসেনের এই প্রতারণার বিষয়টি ছিল অধরা।





মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়ে দিব্বি চালিয়ে গেছেন তিনি কাজকর্ম।এদিকে, প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি চাকরি নেওয়ায় শামীমের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটা শুধু প্রতারণা নয়, সরকারের সাথে ধোঁকা দেওয়ার অপরাধ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।তবে অফিস সহায়ক শামীম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি পাশের উপজেলা কাহালুর নারহট্ট ইউনিয়নের মাধববাঁকা গ্রামের মৃত করমতুল্লাহর ছেলে।





শামীমের শ্বশুর সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া। স্ত্রী ফেনসি খাতুন বাবার কোটায় কাহালু উপজেলা মৎস্য অফিসে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাবা সোনা মিয়াকে তার স্বামী দেখভাল করেন। তাই শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীমের শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া বলেন, আমার সম্মতি নিয়ে নাম ব্যবহার করেছে। জামাই হলেও সে আমার ছেলের মতোই। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না।





খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম হোসেন আগে আদালতে আইনজীবীর মুহুরির কাজ করতেন। বছর দশের আগে তিনি সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়ার মেয়ে ফেনসি খাতুনকে বিয়ে করেন। ফেনসি বাবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়ে কাহালু উপজেলা মৎস্য অফিসে কর্মরত। বিয়ের পর মাধ্যমিক (এসএসসি) পাস শামীম সরকারি চাকরি লাভের আশায় শ্বশুর সোনা মিয়াকে বাবা বানানোর উদ্যোগ নেন।





তিনি শ্বশুরপক্ষের সহযোগিতায় তার একাডেমিক সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের বাবা মৃত করমতুল্লাহর স্থলে শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়ার নাম বসান। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টও নিজের অনুকূলে নেন। এরপর তিনি মুহুরির পেশা ছেড়ে সোনা মিয়ার ছেলে সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুপচাঁচিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অফিস সহায়কের চাকরি পান। সাত বছর ধরে তিনি





দুপচাঁচিয়া উপজেলায় কর্মরত।জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম হোসেনের (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-১০১১৬৫০***) বাবার নাম পরিবর্তন করে মো. সোনা মিয়া করা হয়েছে। তবে মায়ের নাম জাহানারা বেগম রাখা হয়েছে। বর্তমান ঠিকানা, নারহট্ট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উলট্ট পশ্চিমপাড়া এবং স্থায়ী ঠিকানা মাধববাঁকা, কাহালু।





কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তালুকদার বেলাল জানান, শামীম হোসেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাধববাঁকা গ্রামের মৃত করমতুল্লাহর ছেলে। তিনি শুনেছেন, শামীম তার বাবার নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরের নাম বসিয়ে সরকারি চাকরি করছেন।দুপচাঁচিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সাকিউল ইসলাম জানান, তিনি অফিস সহায়ক শামীম হোসেনের জালিয়াতির বিষয়টি এখন জেনেছেন। শামীম প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এখন এই অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।




