শতবর্ষী শংকরী নাগ। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। হাঁটাচলাও করতে পারেন না। সারাদিন শুয়ে থাকতে হয় তাকে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা শুনে নাতির কোলে চড়েই ভোটকেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। ভোট দেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে।বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের ত্রিপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন শতবর্ষী এ বৃদ্ধা। তিনি ত্রিপল্লী গ্রামের বাসিন্দা।





তার নাতি সুমন নাগ জানান, পরিবারের অন্য সদস্যদের ভোট দিতে আসতে দেখে তিনি বাড়িতে থাকতে চাননি। তাই কোলে করে ভোট দিতে নিয়ে এসেছি।শতবর্ষী শংকরী নাগ বলেন, বয়স হয়েছে। হয়তো এটাই জীবনের শেষ ভোট হতে পারে। তাই ভোট দিতে আসছি। তবে তিনি কোন প্রতীকে ভোট দিয়েছেন তা জানাতে রাজি হননি।





এদিকে সকাল ১০টার দিকে উপজেলার একই ইউনিয়নের জয়কালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভ্যানে শুয়ে ভোট দিতে আসেন বাবুইখোলা গ্রামের ১১০ বছরের আজাহের মোল্যা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে আতাউর মোল্লা।তিনি জানান, তার বাবা চলাফেরা করতে পারেন না। এরপরও ভোটের কথা শুনে তিনি বাড়িতে থাকতে চাননি। তার অনুরোধে ভ্যানে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি।





বৃদ্ধ আজাহের মোল্যা বলেন, বয়স তো প্রায় শেষ। জীবনে আর ভোট দিতে পারি কি-না ঠিক নেই। জীবনের শেষ ভোটটা দিয়ে গেলাম।এদিকে জেলার সবচাইতে সংঘর্ষ প্রবণ এলাকা নগরকান্দা এবং সালথায় এবারের নির্বাচন চিত্র একেবারেই সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।





সালথার গট্টি ইউনিয়নের ভাবুকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার ওসমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এমন নির্বাচন এর আগে কখনো আমরা দেখিনি। এতো সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।সিংহ প্রতাপ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার মোমেনা বেগম বলেন, আমি ভেবেছিলাম ভোট দিতে পারবো না। কিন্তু এবার আমি নিজ হাতে ভোট দিতে পেরে খুব আনন্দিত।





নগরকান্দা উপজেলার তালমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা রুস্তম আলী বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছি। উত্তেজনা থাকলেও কোনো সহিংসতা ঘটেনি।সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ব্যাপক ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। নির্বাচনী এলাকায় তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।





ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনে যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে পুলিশের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে। পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।





জেলা পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে ছিল।




