bangla music

bangla music

জাতীয়

কাশিয়ানীতে নৌকার ভরাডুবি: কারণ অনুসন্ধানে কমিটি গঠন

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। উপজেলার ৭টি ইউপির মধ্যে ৫টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে। মাত্র ২টি ইউনিয়ন থেকে নৌকা জয়ী হয়েছে।স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করা, স্বজনপ্রীতি ও জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় এ লজ্জাজনক হার হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপির সংসদীয় আসনের আওতাধীন ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির সংসদীয় আসনের অন্তর্গত ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

দলীয় মনোনয়ন দেওয়া ৭ ইউনিয়নের মধ্যে কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী মশিউর রহমান খান। এখানে মোহাম্মদ আলী খোকন আনারস প্রতীকে ৯০৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আর মশিউর রহমান খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৩৬৯ ভোট।সাজাইল ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাবুবুল আলমের কাছে পরাজিত হয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহাবুবুল আলম মোটরসাইকেল প্রতীকে ৬৬১২ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৩১০ ভোট।

পারুলিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেল প্রতীকে ২২৪২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিল্লাল হোসেন টেলিফোন প্রতীকে ১৬৪২ ভোট পেয়েছেন।মাহমুদপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক মিরাজ চশমা প্রতীকে ১৫১৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাক আলী অটোরিকশা প্রতীকে ১৪৩৫ ভোট পেয়েছেন।রাতইল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুরুল ইসলাম আনারস প্রতীকে ৩৪৫৩ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডেভিড সুরঞ্জন বিশ্বাস থেকে এগিয়ে রয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ও তার নেতাকর্মিরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল দেওয়ার অভিযোগে একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

মহেশপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে লুৎফর রহমান মিয়া ৪৬৩৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের আবুল বাসার মোল্লা পেয়েছেন ৩৮৪৪ ভোট।রাজপাট ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে মিল্টন মিয়া ৪৩২৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টেলিফোন প্রতীকের সাইফুল সরদার পেয়েছেন ২২৯৯ ভোট। উন্মুক্ত ৭ ইউনিয়নের ফুকরায় অটোরিকশা প্রতীকে শাহ ইশতিয়াক পটু; নিজামকান্দি ইউনিয়নে টেলিফোন প্রতিকে কাজী নওশের আলী; পুইশুর ইউনিয়নে টেলিফোন প্রতীকে কামরুল ইসলাম সিকদার; বেথুড়ী ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে ইমরুল হাসান মিয়া; হাতিয়াড়া ইউনিয়নে চশমা প্রতীকে দেব দুলাল বিশ্বাস; সিংগা ইউনিয়নে মোটর সাইকেল প্রতীকে রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলের মতামত না নিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যে সকল ব্যক্তিদের সাধারণ ভোটরা অপছন্দ করেন। তাই সাধারণ ভোটরা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন।যদিও কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, কাশিয়ানীর ৭ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন সঠিক ছিলো। কিন্তু নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কালো টাকার বিনিময়ে ভোটারদের প্রভাবিত করে জয়ী হয়েছে।

কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীর অভাব নেই, কিন্তু জনগণ এত ক্ষিপ্ত হলো কেন বুঝতে পারছি না। কিছুটা ব্যক্তি ও কাজের গাফিলতি আছে বলে মনে হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া প্রার্থী স্থানীয়দের পছন্দ না হওয়ায় সম্ভবত এ ভরাডুবি হয়েছে। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই আমরা বসবো এবং পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করবো।’ পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কাশিয়ানী উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে আওযামী লীগের ৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ৪৯ জন।