bangla music

bangla music

জাতীয়

হরিপুরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোন্দলে আ.লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি

গত ২০১৬ সালের নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ছয়টির মধ্যে চারটিতে জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু গত ১১নভেম্বর বৃহস্পতিবারের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দলটি কেবল দুটি ইউপিতে জয় পেয়েছে। এর মধ্যে একটি ইউপিতে আ’লীগের এক চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিয়েছেন জামানত। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোন্দলের কারণে এবার নির্বাচনী ফলাফলে বিপর্যয় হয়েছে বলে নেতা-কর্মী ও প্রার্থীরা জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে হরিপুর উপজেলার ছয়টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দুটিতে আ’লীগ, তিনটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র ও একটিতে আ’লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে এমন হারে হতাশ দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। হারের পেছনে তাঁরা দলের মধ্যে দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। আ’লীগের নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, হরিপুর উপজেলা আ’লীগে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি স্থানীয় সাংসদ দবিরুল ইসলামের অনুসারী, অন্যটি উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসানের অনুসারী। তবে জিয়াউল হাসানের পেছনে জেলা আ’লীগের কয়েকজন নেতা রয়েছেন।

দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ’লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। দলের মনোনয়ন পান জিয়াউল হাসান। তবে একটি পক্ষ তাঁর বিরোধিতা করে উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম শামীম ফেরদৌসকে সমর্থন দেয়। ওই পক্ষের সবাই স্থানীয় সাংসদ দবিরুল ইসলামের অনুসারী বলে পরিচিত। নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগে ২০১৯ সালে সাংসদের অনুসারী ১১ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করে উপজেলা আ’লীগ।

দলীয় সূত্র জানায়, এবারের ইউপি নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে নাম পাঠায় উপজেলা আ’লীগ। তবে চূড়ান্ত তালিকায় মনোনয়ন না পাওয়ায় সাংসদের অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, গেদুড়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলামের কাছে ১ হাজার ৪০১ ভোটে পরাজিত হন আ’লীগের প্রার্থী আবদুল হামিদ। হরিপুর ইউনিয়নে ৬ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম। এখানে আ’লীগ প্রার্থী গোলাম মোস্তফা পেয়েছেন ১ হাজার ১৬৪ ভোট। তিনি জামানত হারিয়েছেন।

ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী অনিল কুমার দাস ২ হাজার ২৪৫ ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব চৌধুরীর কাছে হেরেছেন। ভাতুরিয়া ইউনিয়নে আ’লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. শাহজাহানের কাছে আ’লীগের প্রার্থী আবদুর রহিম ৫৭৯ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। শাহজাহান উপজেলা আ’লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান। বকুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু তাহের বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেমকে ১ হাজার ২১৮ ভোটে ও আমগাঁও ইউনিয়নে পাভেল তালুকদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হবিবর রহমান চৌধুরীকে ৯৪১ ভোটে পরাজিত করে জয় পেয়েছেন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আ’লীগের প্রার্থী আবদুর রহিম বলেন, ‘আমাকে পরিকল্পনা করে হারানো হয়েছে। এমপি সাহেব লোকবল দিয়ে, অর্থ দিয়ে, প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে শেষ পর্যন্ত আমাকে হারালেন। আমরা তাঁর (সাংসদ) অনুসারী না বলেই এমন ফল পেতে হলো।’

নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে মোট ভোটের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৭। ভোট পড়েছে ৮৯ হাজার ৬৪৪টি। ভোট প্রদানের হার ৪৭ দশমিক ১৮। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৮৪টি বাতিল হয়েছে। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৬ হাজার ২৯৩ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাফ্ফর আহমেদ বলেন, হরিপুর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে সাংসদের বিপক্ষের ব্যক্তিরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত করতে সাংসদের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে, এমনকি বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। এতে নির্বাচনে প্রভাব পড়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য সাংসদ দবিরুল ইসলামের মুঠোফোনে শুক্রবার সন্ধ্যায় কল করলে তিনি ধরেননি। পরে তাঁর ছেলে জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘হরিপুরে প্রার্থী নির্বাচনে উপজেলা ও জেলা কমিটি বাণিজ্য করে কয়েকটি ইউনিয়নে জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিয়েছে। এর ফল আমরা পেয়েছি। এখন তারা দলের প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে সাংসদের অনুসারীরা কাজ করেছেন, এমন সব প্রচারণা চালিয়ে দায় থেকে মুক্তি পেতে চাইছে।’ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশী বলেন, হরিপুরে হারের কারণ বিশ্লেষণ করে সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।