একজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, অন্যজন হয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। একজনের প্রতীক নৌকা, অন্যজনের চশমা। দুজনই নারী, লড়ছেন চেয়ারম্যান পদে। অন্য প্রার্থীদের মতো সমানতালে মাঠে প্রচারণা ও গণসংযোগে আছেন তাঁরারিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর সুনামগঞ্জের সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলার গৌরারং ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে এই দুজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলায় একমাত্র এই ইউপিতেই চেয়ারম্যান পদে নারী প্রার্থী রয়েছেন।





স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার গৌরারং ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন। তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মো. ফুল মিয়া টেবিল ফ্যান প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এই ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালমা আক্তার চৌধুরী। দলের মনোনয়নবঞ্চিত অন্য দুজন লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তাঁরা হলেন চম্পা বেগম (চশমা প্রতীক) ও সারোয়ার আহমদ (মোটরসাইকেল প্রতীক)। এ ছাড়া বিএনপির আরও দুজন স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন দলের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি শওকত আলী।





স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, এই ইউপিতে দুজন নারী প্রার্থী থাকায় প্রচারণায় পেয়েছে ভিন্ন আমেজ। পুরুষ প্রার্থীদের পাশাপাশি দুই নারী প্রার্থীও গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। করছেন উঠান বৈঠক। পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের মধ্যে তাঁরা সাড়া ফেলেছেন। নির্বাচিত হলে তাঁদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা এবং এলাকার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা। এই দুই নারীই বিনয়ী ও পরিশ্রমী। দুজনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।





ছালমা আক্তার চৌধুরীর বাড়ি ইউনিয়নের আহমদাবাদ গ্রামে। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কৃষক লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রয়াত স্বামীও আওয়ামী লীগ করতেন। অন্যদিকে চম্পা বেগমের বাড়ি ইউনিয়নের ভাটি শাপলা গ্রামে। তিনিও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। দীর্ঘদিন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানান। তাঁর বাবাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।





ইউনিয়নের বেড়াজালি গ্রামের সহিবুর রহমান বলেন, ‘জয়-পরাজয় পরে, ভালো লাগছে দুজন নারী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন। তাঁরাও সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখন ভোটাররা যাঁকে ভোট দেবেন, তিনিই তো পাস করবেন।’স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী চম্পা বেগম বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি, নানা সামাজিক কাজে যুক্ত। নারী-পুরুষনির্বিশেষে এলাকার সবার উন্নয়নে কাজ করতে চাই এই আশা নিয়েই প্রার্থী হয়েছি। মাঠে কাজ করতে গিয়ে সবার উৎসাহ ও সহযোগিতা পাচ্ছি। এতে ভালো লাগছে।’





আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছালমা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা দিয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীরাও আমার জন্য কাজ করছেন। যেখানেই যাচ্ছি, মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, এখানে নৌকা জয়ী হবে।’সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য কানিজ সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিসহ সব ক্ষেত্রে নারীরা এখন ভূমিকা রাখছেন। সুনামগঞ্জে একটি ইউপিতে দুজন নারী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজনীতি ও সামাজিক কাজে নারীদের আরও বেশি যুক্ত হতে প্রেরণা জোগাবে বলে মনে করি।’




