পরীক্ষার আগের দিন সন্তান জন্ম দিয়ে শেষ পরীক্ষা দিতে পারেনি শান্তা খাতুন নামে এক এসএসসি পরিক্ষার্থী। শান্তার বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। পেশায় একজন হোমিও চিকিৎসক। বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নুরু মণ্ডলের পাড়ায়।শান্তা এ বছর গোয়ালন্দ আইডিয়াল হাইস্কুল হতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ





নেয়। কিন্তু সোমবার বাচ্চা জন্ম নেওয়ায় সে গত মঙ্গলবারের শেষ পরীক্ষাটি দিতে পারেনি।বুধবার দুপুরে সরেজমিন আলাপকালে শান্তার বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ৯ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শান্তাকে বিয়ে দেই। কিছু বখাটে ছেলের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে এবং আমার মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে অসময়ে আমরা তাকে বিয়ে দেই।





বিয়ের পরও সে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যেই ওর গর্ভে সন্তান আসে। অনেক কষ্ট করে সে গত ১৫ ও ২১ নভেম্বরের ইতিহাস ও ভূগোল পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর সোমবার বিকেলে তার একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। এতে প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতার কারণে সে মঙ্গলবার শেষের ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বিষয়ে অংশ নিতে পারেনি।





আলাপকালে শান্তা জানায়, আমার খুব ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ার; কিন্তু তা আর হলো না। খুব ইচ্ছা ছিল শেষ পরীক্ষাতেও অংশ নেই; কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা ও পরিবারের লোকজনের বাধায় তা আর হলো না। তবে চেষ্টা করব আগামীবার আবারো পরীক্ষায় অংশ নেয়ার। কিন্তু পারব কিনা জানি না। আপাতত আমার মেয়েই আমার সব। ওকে ঘিরেই আমার সব স্বপ্ন।





গোয়ালন্দ উপজেলায় এসএসসির কেন্দ্র সচিব মুহম্মদ সহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর গোয়ালন্দ উপজেলা থেকে ১ হাজার ১৪৫ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ফরম পূরণ করার পরও ১৮ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আমার ধারণা এদের প্রায় সবাই শান্তার মতো বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে; যা খুবই দুঃখজনক বিষয়।





গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্ষ পরিদর্শন করতে গিয়ে জানতে পারি বাচ্চা জন্ম নেয়ায় শান্তা নামে ওই পরীক্ষার্থী শেষ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা চেষ্টা করছি বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে কিন্তু নানা কারণে তা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।




