জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করলে ‘পাপ হবে’ বলে মন্তব্য করা সেই মেয়র আব্বাস আলী আবারো সবার সামনে এলেন। তবে এবার ফেসবুক লাইভে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার এই মেয়র। শুক্রবার বিকালে ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি নিজের ওই মন্তব্য স্বীকার করে নেন।এর আগে, গত সোমবার মেয়র আব্বাসের দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহীসহ দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তাকে বলতে শোনা যায়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায়। তাই তিনি এই ম্যুরাল দিবেন না। এমন বক্তব্যের পরেই তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় পর শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি ফেসবুকে লাইভে আসেন।লাইভের শুরুতেই আব্বাস

১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিওটি মনোযোগ সহকারে শোনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাকে নিয়ে কটূক্তির দুঃসাহস আমার নেই। আমি কটূক্তি করিনি। তবে ম্যুরাল নিয়ে আমার কথা আছে।মেয়র আব্বাস আলী বলেন, আমাদের এখানে একটা বড় মাদরাসা আছে। মাঝে মধ্যেই জানাজা বা অনুষ্ঠানের কারণে আমার যাওয়া হয়। গেলে শিক্ষকদের সাথে মাঝে মাঝে বসা হয়। যতটুকু মনে আছে, কোন জানাজায় ওখানে গিয়েছিলাম। ওখানকার বড় হুজুর জামাল উদ্দিন মাহমুদ সন্দিপি। আমি যতটুকু দেখেছি, আল্লাহর রাস্তা ছাড়া দুনিয়াদারির কোথাও তাকে পাইনি। তিনি কষ্ট করে মাদ্রাসাটা গড়ে তুলেছেন। তার শিষ্যরা সারা বাংলাদেশে বিচরণ করছেন। সারারাত তিনি নামাজ পড়েন। তার হাঁটুতে ব্যথা,

উঠতে পারেন না। আমার যতটুকু মনে হয়েছে, তিনি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহওয়ালা একজন মানুষ।আমার সন্দেহ নাই। আমি মাদ্রাসায় বসেছি, তিনি আমাকে বললেন- তার ছাত্র তাকে কাটাখালি গেটের ভিডিও দেখিয়েছেন। তিনি বললেন, ম্যুরালটার বিষয়ে কোন চেঞ্জ আনা যায় না? আমি বললাম, কী সমস্যা? উনি ব্যাখ্যা দিলেন। বোঝালেন। আমি শুনেছি। আমি তো মানুষ, আমি তো একটা মুসলমান। আল্লাহর কথা আসলে কে না দুর্বল হয়। আমিও একটু দুর্বল হলাম। আমি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করিনি। বলেছি, ম্যুরালটা করলে ইসলামে ঠিক হবে না। এটা পাপ হবে। আড্ডার মধ্যে

অনেক গল্পই তো মানুষ করে। আমিও হয়ত করেছি। হয়ত ভুল করেছি, কিন্তু কত বড় ভুল করেছি?এসময় লাইভেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়র আব্বাস আলী। তিনি বলেন, আমি তো মানুষ। আমি তো ভুল করতেই পারি। তার জন্য ক্ষমা চাই। তারপরও মনোমত না হলে বহিষ্কার করবেন, আমার নামে মামলা দিবেন যতটুকু ভুল করেছি তার জন্য। কিন্তু একের পর এক অত্যাচার জুলুম। আমার অসুস্থ মা তিন-চারদিন না খেয়ে আছে। বাড়িতে মাদক রেখে আমার মাকে-বউকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের হুমকি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। আমি কী এত বড়

অন্যায় করেছি? অন্যায় করলে তো আইন আছে। এভাবে এতকিছু করা কি ঠিক? আমি কতবড় অন্যায় করেছি।তিনি বলেন, আমাকে বলা হচ্ছে, আমি দলের অনুপ্রবেশকারী। আমি যদি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোনো দল জীবনে করে থাকি তাহলে সব শাস্তি মাথা পেত নেব। ২০০২ সঙ্গে যুবলীগ দিয়ে আমার শুরু। ৭ মার্চের ভাষণ আমার চোখ খুলে দিয়েছে। তারপর থেকে যুবলীগ করছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দল করেছি, কেউ প্রমাণ করতে পারলে সুইসাইড করব।তিনি আরও বলেন, আমাকে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী বানানো হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার মালিক বানানো হচ্ছে।

আমার ব্যাংকে লোন কত সেটা নিয়ে লাইভে আসব। যদি আপনারা মনে করেন বড় অন্যায় করেছি, আমার পাশে দাঁড়ানোর দরকার নাই। যদি আমার ওপর অন্যায় হয় তাহলে পাশে দাঁড়ান। আমি সহযোগিতা চাই। আমার অসহায় মাকে দেখতে দিন। চার মাসের বাচ্চার কাছে যেতে চাই। আমার পাশে একটু দাঁড়ান প্লিজ। আল্লাহর ওয়াস্তে দাঁড়ান।মেয়র আব্বাস বলেন, আমি যদি বুঝতে পারি, আমার কথায় আপনার বিবেক নাড়া দিয়েছে, তাহলে পর্যায়ক্রমে একটা একটা করে সবগুলো খোলস খুলে দেব। আমাকে নিয়ে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার পাশে আপনাদেরকে দরকার। আমি আজ কয়দিন ধরে না খেয়ে আছি। আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে হেল্প করুন। আমাকে বাঁচান প্লিজ।